মানিকগঞ্জ জেলা (ঢাকা বিভাগ) আয়তন: ১৩৮৩.০৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৩৮´ থেকে ২৪°০৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪১´ থেকে ৯০°০৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে টাঙ্গাইল জেলা, দক্ষিণে ফরিদপুর এবং ঢাকা জেলা, পূর্বে ঢাকা জেলা, পশ্চিমে পাবনা, রাজবাড়ী জেলা ও সিরাজগঞ্জ জেলা।
জনসংখ্যা ৬৯৮৪৪৭; পুরুষ ৩৫৩২০১, মহিলা ৩৪৫২৪৬। মুসলিম ১১৫৫২০২, হিন্দু ১২৯৪৮৮, বৌদ্ধ ২১৪, খ্রিস্টান ২৮ এবং অন্যান্য ১৪৮।
জলাশয় প্রধান নদী: পদ্মা, যমুনা, ধলেশ্বরী, ইছামতী, কালীগঙ্গা ও গাজীখালী।
প্রশাসন ১৮৪৫ সালে মানিকগঞ্জ মহকুমা গঠিত হয় এবং মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে। জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে হরিরামপুর উপজেলা সর্ববৃহৎ (২৪৫.৪২ বর্গ কিমি) এবং সবচেয়ে ছোট উপজেলা সাটুরিয়া (১৪০.১২ বর্গ কিমি)।
নির্বাচনী এলাক তিনটি -ক) মানিকগঞ্জ-১ (দৌলতপুর, ঘিওর, শিবালয়)
খ). মানিকগঞ্জ-২ ( সিংগাইর, হরিরামপুর ও মানিকগঞ্জ সদরের তিনটি ইউনিয়ন)
গ). মানিকগঞ্জ-৩ ( সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ সদরের সাতটি ইউনিয়ন)
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর তিন শতাধিক পাকসেনার একটি দল সিংগাইর ক্যাম্প অভিমুখে রওনা হলে নূরানীগঙ্গা খালের মোড়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকসেনাদের তিনটি নৌকা ডুবে যায় এবং একজন মেজরসহ বহু পাকসেনা নিহত হয়। ২২ নভেম্বর ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী গ্রামে পাকবাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে ৪১ জন গ্রামবাসি নিহত হন। ১২ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাগজীনগর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকসেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পলায়ন করে। ১৪ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়ারটেক গ্রামে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১ জন পাকসেনা বন্দি হয় এবং ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাইর উপজেলার গাজিন্দা গ্রামে পলায়নপর পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে গাজিন্দা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আমিনুর রহমান, ছক্কেলউদ্দিন, শরীফুল ইসলাম ও রহিজউদ্দিন শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ৪ (সাটুরিয়া পাইলট হাইস্কুল এলাকা, প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এলাকা, তরা ঘাট ও বলাই বাবুর বাড়ি); গণকবর ১ (থানা পুকুরের পার্শ্ববর্তী এলাকা); স্মৃতিস্তম্ভ ২ (তেরশ্রীর শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিমপার্শ্বস্থ চত্বর)।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪১.০২%; পুরুষ ৪৬.০৩%, মহিলা ৩৫.৯৮%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ (১৯৪২), সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৭২), দড়গ্রাম ভিকু মেমোরিয়াল কলেজ (১৯৬৬), খোন্দকার নূরুল হোসেন ল’ একাডেমী, প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৪), পাটগ্রাম অনাথবন্ধু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), নালী বগরিয়া কৃষ্ণচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), ধানকোড়া গিরীশ ইনস্টিটিউশন (১৯১৭), ধূল্যা বিএম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), জামির্তা এস জি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), তেরশ্রী কে এন ইনস্টিটিউশন (১৯২২), ইব্রাহিমপুর ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), বরংগাইল গোপালচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), মানিকগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), ঝিটকা আনন্দ মোহণ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), সুরেন্দ্র কুমার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৮), বালিয়াটি ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), ঘিওর ডিএন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), জয়মন্ডপ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), তেওতা একাডেমী (১৮৯১), মানিকগঞ্জ ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৫৩)।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৬.১৫%, অকৃষি শ্রমিক ৩.২৯%, শিল্প ১.৪৮%, ব্যবসা ১৪.০৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.২৫%, নির্মাণ ১.৪৫%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, চাকরি ১০.৬৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.১০% এবং অন্যান্য ৭.৩৭%।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: আল-আযান (১৯৯২); সাপ্তাহিক: আলোর বাণী (১৯৮১), মুক্তির বাহন, কড়চা, মানিকগঞ্জের খবর (১৯৯৫), আবাবিল (অবলুপ্ত), মানিকগঞ্জ (১৯৭২), মানিকগঞ্জ বার্তা (১৯৮১), বুধবার, পতাকা, চলমান (১৯৮০), মুক্তির ডাক (১৯৮০), নবগ্রাম (১৯৭৮), জাগরণী (১৯৬৫), ঋতু-রং-মন (১৯৬৭), আবহমান (১৯৭৮), মৈত্রী ইন্টারন্যাশনাল (১৯৭৯), বিটপ (১৯৮১), দিশারী, আলোকলতা, শিউলী, দুর্বাচল, দাওয়াল, গাজীখালী, ছায়াপল্লী।
লোকসংস্কৃতি লোকউৎসব, লোকগাঁথা, লোকক্রিড়ায় মানিকগঞ্জ জেলা সমৃদ্ধ। বেড়া ভাসান, বীছাত, ওন্নি গান মানিকগঞ্জ জেলার স্থানীয় উল্লেখযোগ্য লোকাচার। এছাড়া জারীগান, সারিগান, ভাটিয়ালী, রাখালী, কবিগান, মুরশিদী, মারফতী, বাউলগান, পৌষ-পার্বনের গান, গাজীরগান, গাজনের গান, বেহুলার গান, ব্যাংবিয়ের গান, ঘেটু যাত্রা, ধুয়া গান, বিচারগান, ফকিরীগান, মেয়েদের বারোমাসী গীত, মেহেদী তোলার গীত, হলুদ বাটার গীত, বর কনেকে হলুদ মাখানোর গীত, বিয়ের গীত, মর্সিয়া, পাঁচালী ইত্যাদির প্রচলন রয়েছে
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মানিকগঞ্জ জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।